এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তার সর্বশেষ Asian Development Outlook (ADO) সেপ্টেম্বর ২০২৫ প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশ হবে। গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ শতাংশ হিসেবে।
তবে এডিবি সতর্ক করেছে যে, এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তারা বিশেষ করে নিম্নলিখিত চারটি কারণকে প্রবৃদ্ধিতে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে:
রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অনিশ্চয়তা
দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিয়মিত পরিবর্তন অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ধীর করে দিতে পারে।
ঘন ঘন বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ
কৃষি ও অবকাঠামো খাতে ক্ষতির কারণে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও চাহিদা বিঘ্নিত হতে পারে।
শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা ও বিতর্ক
শ্রমিক প্রতিবাদ, বেতন দাবি, কাজের পরিবেশ ইত্যাদির সমস্যা শিল্প উৎপাদনকে বিঘ্নিত করতে পারে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার দুর্বলতা
দামের ঊর্ধ্বগতি ঈলাসটিক চাহিদাকে কমিয়ে দিতে পারে, ফলে ভোগ্যব্যয় ও বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।
বৃদ্ধির অর্থনৈতিক অভ্যন্তরীণ চালিকা এবং বাধা
এডিবি বলেছে যে ভোগ্যব্যয় (Consumption) এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা হিসেবে কাজ করবে, বিশেষ করে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সরকারি ব্যয়ের কারণে।
তবে বিনিয়োগ ও শিল্প উৎপাদনকে নীতিগত সীমাবদ্ধতা ও ব্যবসায়িক নিরাপত্তার অভাবে মন্থর হতে পারে।
রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় বাজারে প্রতিযোগিতার চাপ নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
এ ছাড়া ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, ঋণপাঠ্য (non-performing loans) সমস্যা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রতিষ্ঠিত প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করতে পারে।
অন্যান্য প্রেক্ষাপট ও প্রবণতা
এডিবি জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা প্রায় ১০ শতাংশ ছুঁয়েছে।
আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে এডিবি ধারণা করছে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেছেন, ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধि, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর।
এডিবি উল্লেখ করেছে যে ২০২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারের অনিশ্চয়তা, নীতি সৃষ্টির বিলম্ব ও ব্যাংক খাতের দুর্বলতা প্রবৃদ্ধির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্লেষণ ও সুপারিশ
প্রবৃদ্ধির ৫ শতাংশের লক্ষ্য যদি সফল হয়, তা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সূচনা হবে। তবে সেই জন্য শুধু উচ্চ প্রবৃদ্ধির নীতি গ্রহণই যথেষ্ট নয়, নির্বাহযোগ্য নীতি, বাজবদ্ধ সংস্কার এবং দ্রুত বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
শিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানি খাতকে সাসটেইন করতে হলে মজুদ সক্ষমতা, প্রযুক্তি গ্রহণ, শ্রম-সহায়ক নীতিমালা দরকার।
ব্যাংক খাত ও আর্থিক অবকাঠামো সবল না হলে বিনিয়োগের প্রবাহ ভয়ানকভাবে বাধার মুখে পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাজার প্রবণতা মনিটর করতে হবে; বিশেষ করে শুল্ক বিরোধ ও বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে সৃষ্ট চাপে বাংলাদেশের রপ্তানিক্ষেত্র দ্বিগুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দুর্যোগ-প্রতিরোধ সক্ষমতা, জলবायु অভিযোজন ও কৃষিখাতের স্থিতিশীলতা বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অবিচ্ছেদ্য ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে।

